নওগাঁয় চাঁদা আদায়ের অভিযোগে মেহেদী হাসান অন্তর (৩৪) নামের সাংবাদিককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টায় শহরের কোমাইগাড়ী এলাকার নজিপুর হোটেলের সামনে থেকে চাঁদার নগদ ১৫ হাজার টাকাসহ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ওই সাংবাদিক শহরের পার নওগাঁ ভড়িয়াপাড়া মহল্লার মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের নিন্দইন গ্রামের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান দীর্ঘ বছর যাবত ইট, বালু ও পাথরের ব্যবসা করে আসছেন। সম্প্রতি সাংবাদিক ওই ব্যবসায়ীর মুঠোফোনে কল করে ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ২৫ মার্চ নওগাঁ শহরে ডেকে নেয় মেহেদী হাসান অন্তর। তার কাছে থেকে চাঁদা দাবী করা হয় ১ লক্ষ টাকা। এই টাকা দিতে না চাইলে পর্যায়ক্রমে ওই ব্যবসায়ীকে আবারো ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন অন্তর। পরে ৩০ জুলাই আবারো ওই ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে চাঁদার টাকা দেওয়ার দিন ও সময় নির্ধারন করে দেন তিনি। এ ঘটনায় নিরুপাই হয়ে ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান নগদ ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টায় শহরের কোমাইগাড়ী এলাকার নজিপুর হোটেলের সামনে যান। সেখানে সাংবাদিক মেহেদী হাসান অন্তর এসে চাঁদার ১৫ হাজার টাকা নিয়ে বাঁকী টাকার জন্য পুনরায় ব্যবসায়ীকে হুমকি দিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে ব্যবসায়ীকে মারধরের চেষ্টা করলে তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে সাংবাদিক অন্তরকে আটক করে থানায় সংবাদ দেন। পুলিশ আটক অন্তরকে হেফাজতে নিয়ে চাঁদা আদায়ের নগদ ১৫ হাজার টাকা জব্দ করা করে। বিষয়টি নিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সদর মডেল থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান বলেন, মেহেদী হাসান অন্তর নিজেকে একাধিক বাংলা ও ইংরেজী জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেছিলেন। স্থানীয় একটি সাংবাদিক সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবেও পরিচয় দিয়েছেন তিনি। টাকা না দিলে সে আমার ব্যবসায়িক ক্ষতি ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার হুমকি দিয়ে আসছিলো। পরে বাধ্য হয়ে ১৫ হাজার টাকা তাঁর হাতে দেই। সেই টাকাসহ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিক নামধারী এই চাঁদাবাজকে দেওয়া প্রত্যেকটা নোটের ছবি আমার কাছে সংরক্ষিত ছিলো। আগে থেকেই ধারনা করেছিলাম সে আমার উপর চড়াও হতে পারে। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারের পর আমার দেয়া প্রত্যেকটা নোট জব্দ করেছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজন এবং থানা পুলিশের ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিলো।
এবিষয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন,মেহেদী হাসান অন্তর সাংবাদিক চাঁদা আদায়ের সময় তাকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছিলো স্থানীয়রা। ওই সাংবাদিকের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের নগদ ১৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
নওগাঁ জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এটিএন বাংলা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি রায়হান আলম বলেন, বর্তমানে অনেকে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। এরাই মূলত চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। একজন মূল ধারার সাংবাদিক কখনোই চাঁদাবাজ হতে পারে না। তাই গ্রেফতারকৃত ওই সাংবাদিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তিনি।