তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগ করে মেরে ফেলার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট

সম্পাদকীয় 6 months ago আইন সংবাদ

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় সরকারি সড়কের পাশে লাগানো অর্ধশত তাল গাছ  অভিনব কায়দায় কীটনাশক প্রয়োগ করে মেরে ফেলার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। কীটনাশক দেওয়া ৫০ টি তালগাছের ছবি দেখে আদালত বলেন, আমাদের  হ্নদয় বেঙে গেছে। একটা পশুরও তো মায়া থাকে। এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।


রোববার ( ১২ ফেব্রুয়ারি) এ সংক্রান্ত এক শুনাননিকালে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সবন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।


গত ১ ফেব্রুয়ারি তলবের ধারাবাহিকতায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলম আজ হাইকোর্টে হাজির হয়ে তালগাছের বিষয়ে তার ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করেন। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। আদালত  শুনানির শুরু থেকে বিকেলে কোর্ট নেমে যাওয়া পর্যন্ত শাহরিয়ার আলমকে দাঁড় করিয়ে রাখেন।


শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, আইন-আদলতে দিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষ ভালো করা সম্বব নয়। যদি না আমরা নিজেরাই মানবিক ও সচেতন না হই।


কীটনাশক প্রয়োগের কারণে তালগাছগুলোর করুণ চিত্র দেখে হাইকোর্ট কলেন, আপনারা হয়তো মনে করবেন যে তালগাছের মতো ছোট্টো একটা বিষয়ও হাইকোর্ট দেখে? হ্যাঁ, আমাদের দেখতে হয়। কারণ, সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয় জাগ্রত বিবেক। আমরা তালগাছগুলোতে বিষ দেওয়ার সংবাদ দেখে আহত হয়েছি। একটা গাছ বড় হতে ১২-১৪ বছর সময় লাগলো। আর সেই গাছগুলোর ডাল কেটে বিষ দেওয়া হলো। 


অ্যাডভোকেট মো. জাহিদুল হক জাহিদ আজ আদালতে শাহরিয়ার আলমের পক্ষে শুনানি করেন। প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার । আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী। 


গত ৩১ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোয় ৫০ তালগাছ কীটনাশক:দোষীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ কেন নয়,  শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়।


সম্পাদকীয়তে বলা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়োমিত মৃত্যুর ঘটনা সত্যিই আমাদের মনোযোগের আইরে থাকে। যেমন পানিতে ডুকে শিশুর মৃত্যু ও বজ্রপাতে মৃত্যু। প্রতিবছর এসব কারণে এত বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। এ নিয়ে সরকার বা নীতিনির্ধারকদেরও বলিষ্ঠ কিছু করতে দেখা যায় না। 


নানান সময় প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সেগুলোর কোনো সুফল মেলেনা, পুরোপুরি ব্যর্থই বলা যায়। বজ্রপাত নিরোধে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করেছেন, কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনাকাটাও বিসানোও হয়েছে । লাখ লাখ তালবীজ সংগ্রহ ও তালগাছ রোপণের কথাও বলা হয়েছে।


প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রায় এক দশক আগে স্থায়ী এক বৃদ্ধসহ কয়েকজন ব্যক্তি সড়কেরে উভয় পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তাল বীজ বপন করেন। সেসব তাল গাছ বড় হয়ে এখন ছায়া দিচ্ছে। একটি তাল বীজ গাছ হয়ে উঠতে সময় লাগে এক দশক বা যুগের বেশি।


ফলে বোঝা যায়, অনেক নিষ্ঠা ও ধৈর্য নিয়ে পরিচর্যা করে তাল গাছগুলো বড় করে তুলছেন বাইগাচার সেসব উদ্যোগী মানুষ। আর আমরা অবাক হলাম, সেই গাছগুলো নিধনে বাকল তুলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন শাহরিয়ার আলোম নামের স্থানীয় এক আওয়ামি লীগ নেতা। প্রকৃত ও গাছের প্রতি কী রকম নির্দয় হলে এমন কাজ করা যায়, সেটিই প্রকাশ পায় এ ঘটনায়।

এদিকে তালগাছ নিধনের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামি লীগের জেষ্ঠ সহ-সভাপতি শাহরিয়ার আলম। সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য প্রথম আলোর প্রতিবেদককে অনুরোধও করেন তিনি। তাল গাছের ছায়ার কারণে শাহরিয়ারের লাগানো আম গাছ ঠিকমতো বেড়ে উঠছিল না । ফলে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।


Responsive image

প্রাসংঙ্গিক নিউজ

শিরোনাম

⬤ রাজবাড়ীতে হারানো মোবাইল উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের নিকট হস্তান্তর করেন এসপি ⬤ ভোলায় মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ বাস্তবায়নে সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত ⬤ আলোচিত নাইকো দুর্নীতি মামলায় ‘দেখে দেখে’ সাক্ষী নেওয়া বন্ধে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আবেদন ⬤ রাজধানীতে পুলিশের অভিযানে সিঁধেল চোর চক্রের মূল হোতাসহ গ্রেফতার সাত ⬤ নারী কমিশনার’কে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় মূলহোতা মাসুদসহ জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব