বিচারপতি সিদ্দিকী বলেন: আমি বিচারপ্রার্থীদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলাম

সম্পাদকীয় 8 months ago প্রচ্ছদ

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেছেন, আমার অতীত যাই হোক না কেন, সর্বোচ্চ আদালতের একজন বিচারক হিসেবে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ সচেতন। নিরপেক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাকি দিনগুলো অতীতের মতো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলাম।



রোববার (১১ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, আমি দ্বিধাহীনভাবে সত্য কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই। আমার জন্ম একটি রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা, মাতা, ভাই ও নিকট আত্মীয় সবাই একই আদর্শ নিয়ে নিজ নিজ জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। জাতির পিতার রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্ররাজনীতি থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন স্তরে নির্বাহী পদে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। এ কারণেই বেছে নিয়েছিলাম আইন পেশা।

তিনি বলেন, পিতা-মাতার স্বপ্ন ছিল একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজ বিনির্মাণে জীবনকে উৎসর্গ করা। কতটুকু সফল হয়েছি সে মূল্যায়ন নিজে করিনি কখনো। তবে যেকোনো কাজের প্রতি নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও সততা পূর্বাপর একই ধারায় অটুট রাখার চেষ্টা সার্বক্ষণিক অব্যাহত রেখেছি। মূল স্রোতধারার আদর্শিক জায়গা থেকে সরে যাইনি কখনো। কথা ও কাজে দুরকম হয়েছে, চরম প্রতিপক্ষও এমন অভিযোগ তোলেনি আজ পর্যন্ত। তবে লক্ষ্যচ্যুত হয়েছি এ কথা অস্বীকার করি না। রাজপথ ছেড়ে আসীন হয়েছি উচ্চ আদালতের বিচারকের আসনে। বিচারক হিসেবে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা রাখতে পেরেছি কি না সে বিচারের ভার তো আপনাদের ও বিচারপ্রার্থী জনগণের কাছে। 


বিচারপতি বলেন, সত্য কথা স্পষ্ট করে বলা আমার সহজাত প্রবৃত্তি, যা আমার জীবন চলার পথে প্রায়শই প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে। আত্মবিশ্বাসের শক্তিতে সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া আমার জীবনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মুক্তিযুদ্ধ ও মহান স্বাধীনতাসহ এই রাষ্ট্রের যা কিছু অর্জন তার পেছনে দৃশ্যমান ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুদৃঢ় ও আদর্শিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব। রাষ্ট্রের সব স্তরে নেতৃত্বের জায়গাটি আদর্শিক ও নৈতিকভাবে সঠিক ও সুদৃঢ় হলে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। অনুরাগ ও বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতান্ত্রিক ধারায় সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের আর্থসামাজিক ও মানব সম্পদের উন্নয়ন, রাষ্ট্রের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জাতিগত তবে আমাদের জন্মের ইতিহাস, জাতির পিতা ও বাংলাদেশে এসব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্থায়িত্ব করণ অপরিহার্য। পরিবার থেকে রাষ্ট্রের তিনটি অংশেই সাহসী, বিচক্ষণ, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নির্লোভ, ত্যাগী, আদর্শিক, সৎ নেতৃত্ব আজ ভীষণ প্রয়োজন। একটি জনকল্যাণকর সুখী-সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপকে স্থায়িত্ব করতে স্বাধীন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।


তিনি প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ১১ মাস পূর্বে সংবর্ধনা সভায় আপনি যে বার্তা জাতিকে দিয়েছেন, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এই বার্তার সঙ্গে আমি সম্পূর্ণভাবে একমত পোষণ করে বলতে চাই, আমার অতীত যাই হোক না কেন প্রথমে আমি একজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষ এবং এ দেশের সুনাগরিক, সর্বোপরি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন বিচারক হিসেবে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণভাবে সচেতন।

আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, আজকের এই সংবর্ধনা সভায় আপনার মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে জানাতে চাই, নিরপেক্ষ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আপনি যে শপথ বাক্য পড়িয়েছেন তা আমি বিচারিক জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সার্বক্ষণিক স্মরণ রেখে নিরপেক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বাকি দিনগুলো অতীতের মতো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করলাম।

রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সদ্য নিয়োগ পাওয়া তিন বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়।

সুপ্রিম কোর্টের রীতি অনুযায়ী, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির নতুন বিচারপতিদের গৌরবময় কর্মজীবন পড়ে শোনান।

এরপর আপিল বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বক্তব্য রাখেন। এসময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতি ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে তিন জনকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তার নির্দেশক্রমে তাদের নিয়োগ দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ছয় জন বিচারপতি ছিলেন। নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়াল ৯ জনে।

Responsive image

প্রাসংঙ্গিক নিউজ

শিরোনাম

⬤ রাজবাড়ীতে হারানো মোবাইল উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের নিকট হস্তান্তর করেন এসপি ⬤ ভোলায় মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ বাস্তবায়নে সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত ⬤ আলোচিত নাইকো দুর্নীতি মামলায় ‘দেখে দেখে’ সাক্ষী নেওয়া বন্ধে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আবেদন ⬤ রাজধানীতে পুলিশের অভিযানে সিঁধেল চোর চক্রের মূল হোতাসহ গ্রেফতার সাত ⬤ নারী কমিশনার’কে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় মূলহোতা মাসুদসহ জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব