প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (জন্ম: ৩ ডিসেম্বর ১৯২৮; মৃত্যু: ১১ জানুয়ারি ২০১৪ ) বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পরর্বতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তথা দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একাধারে গবেষক, লেখক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, ভাষা সৈনিক, অভিধানপ্রণতো। ১৯৪৯-৫২-এর ভাষা আন্দোলনে তিনি সকক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছিলেন।
জন্ম:
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ৩ ডিসেম্বর ভারতের মূর্শিদাবাদ জেলার জংগীপুর মহকুমার দয়ারামপুর গ্রামে মুহম্মাদ হাবিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করনে৷ বাবা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস ছিলেন ব আইনজীবী৷ জহির উদ্দিন বিশ্বাস ছিলেনএকজন সক্রিয় রাজনতৈকি কর্মী। প্রথমে আঞ্জুমান এবং পরে মুসলমি লীগ আন্দোলনরে সাংগঠনকি পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় হাবিবুর রহমানের পিতা জাতীয় যুক্তফ্রন্ট এর বিভাগীয় নেতা ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে তাঁকে গ্রেফতার করে বহরমপুর কারাগারে পাঠায়, অবশ্য কয়কেদনি পরই তিনি মুক্তি লাভ করেন। ভারত বিবাগের পর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে মূর্শিদাবাদ ছেড়ে জহির উদ্দিন বিশ্বাস রাজশাহীতে চলে আসনে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন৷ হাবিবুর রহমানের মা গুল হাবিবা ছিলেন গৃহিণী।
শিক্ষাজীবন:
প্রাথমিক পাঠ শুরু হয় বাংলা, আরবি, উর্দু ও ইংরেজি এই চার ভাষা নিয়ে। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯৪৫ সালে ম্যাট্রকিুলেশন পাশ করে আই.এ. ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৪৭ সালে প্রথম বিভাগে আই.এ. পাশ করে চলে আসেন রাজশাহী। ১৯৪৭ সালের শেষ দিকে রাজশাহী কলেজে বি এ. ভর্তি হলেন হাবিবুর রহমান।
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতহিাস বিষয়ে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে বি এ. সম্মান ও ১৯৫১খ্রিস্টাব্দেএম.এ. পাশ করনে। পরবর্তীতে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যারয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বি এ . সম্মান ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্ম জীবন:
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর কর্মজীবন শুরু করে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসাবে যোগ দিয়ে। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাশয়ে যোগ দেন। সেখানে তিনি ইতিহাসের রিডার (১৯৬২-৬৪) ও আইন বিভাগের ডিন (১৯৬১) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইন ব্যবসায়কে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন এবং ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেন। তিনি সহকারী এডভোকেট জেনারেল (১৯৬৯), হাইকোর্ট বার এসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট (১৯৭২) ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলেরও (১৯৭২) সদস্য ছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০-৯১ মেয়াদে বিচারপতি শাহাবুদ্দনি আহমদে অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে হাবিবুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে প্রধান বিচারপতি বচিারপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।।
দেশে বিদেশে বিচারপতি হাবিবুর রহমান অনেক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এগুলোর মধ্যে প্রধান হল - অস্ট্রেলিয়ার পার্থে অনুষ্ঠিত এশিয়া এশযি়া প্যাসিফিক দেম সমূহের প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলন (১৯৯১), নাইজেরিয়ারর আবুজাতে চর্তুথ কমনওয়েলথ প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলন(১৯৯২), নেপালের কাঠমুন্ডুতে প্রথম সার্ক প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলন (১৯৯৫)।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা:
১৯৯৫ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধানপতি হিসাবে তিনি১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তথা দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সাহিত্যে অবদান
একজন গবষেক ও লেখক বিচারপতি হাবিবুর রহমান সাহিত্য ও অন্যান্য বহু ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হল:
১.ল' অফ রিকুইজিশন (১৯৬৬)
২.রবীন্দ্র প্রবন্ধে সঞ্জনা ও পার্থক্য বিচার(১৯৬৮)
৩.যথা-শব্দ (১৯৭৪)
৪.মাতৃভাষার স্বপক্ষে রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৩)
৫.কোরআন সূত্র (১৯৮৪)
৬বচন ও প্রবচন (১৯৮৫)
৭.গঙ্গাঋধি থেকে বাংলাদেশ (১৯৮৫)
৮.রবীন্দ্র রচনার রবীন্দ্র ব্যাখ্যা (১৯৮৬)
৯.রবীন্দ্র কাব্যে আর্ট, সঙ্গীত ও সাহিত্য (১৯৮৬)
১০.অন রাইট্স অ্যান্ড রিমিডেস
১১.আমরা কি যাব না তাদের কাছে যারা শুধু বাংলায় কথা বলে (১৯৯৬)
পুরস্কার:
১.বাংলা একাডেমী পুরস্কার, (১৯৮৪)
২.একুশে পদক, (২০০৭)
৩.দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস গবষেণা পরিষদ পুরস্কার
৪.দক্ষ প্রশাসক পুরস্কার, (১৯৯৬)
৫.ইব্রাহিম মেমোরিয়াল পুরস্কার
৬.অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার
৭.হিউম্যান ডিগনিটি সোসাইটি থেকে সরোজনী নাইডু পুরস্কার
৮.বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য মার্কেন্টােইল ব্যাংক পুরস্কার, (২০০৫)
৯.স্পেশার কনট্রিবিউশন টু হিউম্যান রাইটস পুরস্কার
বাংলাদেশের এশিয়াটিক সোসাইটির একজন ফেলো ও লিন্ক’স ইন এর বেঞ্চার
মৃত্যু
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করনে।