ধর্ষণ মামলায় পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। নিচের নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ে ও প্রতারণার ঘটনায় এ মামলা করা হয়।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহারের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন আরজু। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বাদী পক্ষেরে আইনজীবী এস এম লুৎফর রহমান জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গত বছর এ মামলাটি দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইসভেস্টেগেশনকে (পিবিআই) তদনেরতর আদেশ দিয়েছিলেন। পিবিআই তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে । সেই প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। আজ পরোয়ানা সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল।
এর আগে, গত বছর ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আদালতে এ মামলা দায়ের করে। ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দী গ্রহন করে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয় তদন্তের আদেশে দেন। অভিযোগ তদন্তের পর ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম ট্রাইব্যুনালে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাদীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তখন তিনি একটি ফার্মাসিটিকক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এ সময় বাসায় প্রায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছিলেন। তখন তার আত্মীয়- স্বজনেরা তাকে পুনরায় বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে ২০০১ সালের শেষের দিকে বাদীর চাচার মাধ্যমে আসামীর সাথে পরিচয় হয়। পরে আসামি নিয়মিত বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে ও একপর্যায়ে সফল হয়।
আসামি তাকে জানান. তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন। তার প্রথম পক্ষের ছেলেকে বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে বাদীকে তার প্রতি দুর্বল করে ফেলে। সামাজিক নির্ভরতার জন্য ও একাকীত্বের অবসানসহ নতুন সংসার শুরুর মাধ্যমে তিনি আসামিকে মনে প্রাণে ভালবেসে ফেলে এবং বিয়ের প্রস্তাবের পরিপেক্ষিতে রাজি হন। ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসামির সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
২০০৮ সালে ১৬ জানুয়ারি তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে । সন্তান গর্ভে আসার পর আসামি বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাদীর দৃঢ়তার জন্য বাচ্চা নষ্ট করতে পারেনি। বাচ্চা হওয়ার পর আসামির আচার- আচরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। বদীর বাসায় আসা কমিয়ে দেয়। বাদীর নামে ফ্লাট কিনে দেওয়ার কথা ছিল বলে তার বাবার কাছ থেকে নেওয়া ১০ লাখ টাকা, জমানো ৮ লাখ টাকা ও তার ১৫ ভরি ওজনের স্বর্ণলংকার বিক্রি করে আাসামিকে টাকা দেয়। কিন্তু আসামি তাকে কোন ফ্লাট কিনে দেননি এবং কোন টাকাও ফেরত দেয়নি। এক পর্যায়ে আসামি বাদীর বাসায় আসা বন্ধ করে দেয় ।
পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আসামির প্রথম পক্ষের স্ত্রী জীবিত। ওই ঘরে একটি কন্যা সন্তান আছে । আরো জানতে পারেন আসামি এতদিন বাদীর কাছে ফারুাক হোসেন নাম প্রচার করলেও আসলে তার নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। মিথ্যা তথ্য ওপরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য তাকে বিয়ের নামে প্রতারনা করেন। এক পর্যায়ে আসামি বাদীর সাথে বিয়ে , গর্ভপাত ও ঔরসের কন্যার পিতৃ পরিচয়কে সরাসরি অস্বীকার করে ।
মামলার তদন্তে দেখা যায়, বাদীর কন্যা সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে প্রমানিত হয় আসামি তার জৈবিক পিতা।