আজ ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস

সম্পাদকীয় 3 months ago জাতীয়

আজ ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে প্রতি বৎসর আমাদের সামনে হাজির হয়। হাজির হয় কর্ম বিরতি নিয়ে, জাতীয় ছুটি নিয়ে। আর হাজির হয় শ্রমিকের অধিকারের বার্তা নিয়ে। হাজির হয় যাদের শ্রমে ঘামে তৈরি তৈরি এই মানবসভ্যতা তাদের মানবাধিকার নিয়ে।


আন্তর্জাতিক মে দিবসে তাই চলুন জেনে নেই মানবসভ্যতার কারিগরদের, শ্রমিক দের রক্তে লেখা ইতিহাস সম্পর্কে। জেনে নেই তাদের করুন ইতিহাস সম্পর্কে। আর চলুন বুঝতে চেষ্টা করি কতটুকু অধিকার পাচ্ছে আমাদের শ্রমজীবী মানুষেরা।  


১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শহিদ শ্রমিকদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে পালিত হয় এই দিবস। সে দিন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি বোমা নিক্ষেপ করে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি। পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। আর পুলিশের এই গুলিতে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়।


১৮৮৯ সালের ১৪ই জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সম্মেলনে ১লা মে শ্রমিক দিবস ঘোষণা করা হয়। আর এই ঘোষণার পরের বৎসর থেকেই ১লা মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে।


বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টির বেশি দেশে মে দিবস সরকারি ছুটির দিন। এছাড়া বেশ কিছু দেশে বেসরকারিভাবেও পালিত হয় শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই দিবসটি।


কিন্তু এখানে একটা মজার বিষয় হল, যে যুক্তরাষ্ট্রে ‘মে দিবস’ তারাই পালন করে না আন্তর্জাতিক এই দিবস। একই বিষয় কানাডার ক্ষেত্রে। তবে তারা সেপ্টেম্বর মাসে শ্রমিক দিবস পালন করে থাকে।


যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিবস পালনের উদ্যোক্তা। হে মার্কেটের হত্যাকাÐের প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন ১লা মে তারিখে যে কোনো আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে। সেজন্য তিনি ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।


স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে মে দিবস সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির প্রধান দাবি ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস, সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হলেও বেসরকারি খাতে এখনও ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের সুফল পায়নি।

নিম্ন মজুরির ফাঁদে শ্রমজীবী মানুষকে আটকে ফেলা হয়েছে। শ্রমিকরা এখন বাধ্য হয় ওভার টাইম করতে। কারণ তা না করলে সংসার চালানো অসম্ভব।


কার্ল মার্ক্স তাঁর ‘উদ্বৃত্ত মুল্যতত্ত¡’ এ হিসাব করে দেখিয়েন, মালিকের মুনাফা বাড়ানোর পথ। শ্রমিকের শ্রম, সময় আর যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো। ফলে কর্মঘণ্টা বাড়ছে, বাড়ছে উৎপাদন। আর তাঁর সাথে পাল­া দিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব।

প্রতি বছর ২০/২২ লাখ তরুণের মাত্র দুই লাখের মতো কর্মসংস্থান রাষ্ট্র করতে পারে। কয়েক লাখ লোক পাড়ি জমায় বিদেশে। আর বাকিরা দেশে কোনোমতে কাজ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে।


আমাদের দেশের ৬ কোটি ৩৪ লাখ শ্রমজীবীর ৩ কোটি কৃষিখাতে, ৫০ লাখ শ্রমিক গার্মেন্টসে, ৩০ লাখের বেশি নির্মাণ খাতে; ৫০ লাখ পরিবহন খাতে; ১০ লাখের বেশি লোক বিভিন্ন শ্রমে নিয়োজিত বলে জানা যায়।

প্রতি বৎসর আসে মে দিবস। আমরা সকলেই যেন দিবসটি পালন করি সরকারি ছুটি হিসেবে। শ্রমজীবী মানুষ, শ্রমিক সংগঠনসম‚হ মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে অনেকটা দায়সারাভাবে দিবসটি পালন করে থাকে। দেখে মনে হয় এ যেন উৎসব, অধিকার প্রতিষ্ঠার চেতনা এখানে বিরল।


অধিকার নেই বলেই প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাসের মধ্যেও লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিককে শুধু বেতনের জন্য, শুধু চাকরি বাঁচানোর জন্য, শুধু দুবেলা খেয়ে পড়ে বাঁচার তাগিদে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পায়ে হেঁটে ঢাকা আসতে হয়। অধিকার নেই বলেই শত স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে তাদের কাজ করতে হয়, শ্রমে ঘামে তৈরি করে যেতে হয় নিষ্ঠুর এই সভ্যতা। সভ্যতা! এ যেন শ্রমিকের রক্তে লেখা ইতিহাস।  


Responsive image

প্রাসংঙ্গিক নিউজ

শিরোনাম

⬤ রাজবাড়ীতে হারানো মোবাইল উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকের নিকট হস্তান্তর করেন এসপি ⬤ ভোলায় মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ বাস্তবায়নে সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত ⬤ আলোচিত নাইকো দুর্নীতি মামলায় ‘দেখে দেখে’ সাক্ষী নেওয়া বন্ধে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আবেদন ⬤ রাজধানীতে পুলিশের অভিযানে সিঁধেল চোর চক্রের মূল হোতাসহ গ্রেফতার সাত ⬤ নারী কমিশনার’কে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় মূলহোতা মাসুদসহ জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব